মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০১৩

৫ ই মে কালো রাত : বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটা ভয়ঙ্করতম নারকীয় গনহত্যা

গত ৫ ই মে ২০১৩ ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম দিন। সরকার কর্তৃক সাধারন নাগরিক ও ইসলামপ্রেমীদের উপর চলে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ৫ ও ৬ তারিখের সকল ঘটনা তুলে ধরা হলো এখানে।

হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ ৫ মে ২০১৩- এ তাদের ১৩ দফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ঢাকা অবরোধের ডাক দেয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হেফাজত ইসলামের কর্মীরা ঢাকার প্রতিটি প্রবেশমুখে অবস্থান নেন। যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ভোর থেকেই সড়ক অবরোধ সৃষ্টি করে হেফাজতের কর্মীরা। ফলে ঢাকার সঙ্গে সিলেট ও চট্রগ্রামের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফজরের নামাজ সেরেই পোস্তগোলা এক নম্বর সেতুতে জড়ো হয় হেফাজত কর্মীরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাদের সংখ্যা কয়েক হাজারে পৌছায়। এ সেতু দিয়ে নারায়ণগঞ্জ ও মাওয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গাবতলী ব্রিজ থেকে শুরু করে আমিনবাজার, টেকনিক্যাল  মোড় পর্যন্ত হেফাজত কর্মীরা রাস্তায় অবস্থান নেয়। কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হেফাজত কর্মীরা অবরোধ তৈরি করেন। ফলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের  যান চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।  এ সময় তারা ১৩ দফা দাবি ও নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকে। বাবুবাজার-নয়াবাজার এলাকাতেও কয়েক হাজার হেফাজত কর্মী নামাজ পড়েই অবস্থান নেয়। ব্রিজের দুই পাশে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।  টঙ্গীব্রিজ থেকে গাজীপুর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হেফাজত কর্মী অবস্থান নেয়। কয়েক লাখ হেফাজত কর্মী অবরোধ তৈরি রাখে। এসয় তারা ১৩ দফা দাবি মেনে নিতে নানা স্লোগান দেয়।  ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনেক স্পটেই পুলিশ বেরিকেড দিয়ে রাখে যাতে তারা ঢাকা প্রবেশ করতে না পারে। এসকল প্রত্যেকটি যায়গায় তারা শান্তিুপূর্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকে। কোথাও কোথাও ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরী করে বক্তব্য, স্লোগান, জিকির, গান পরিবেশনের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি পালন করতে থাকে।









পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী হেফাজত ইসলামের দুপুর ৩টায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের কথা ছিল। কিন্তু আওয়ামী সরকার তাদের এ গনতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করে সমাবেশের অনুমতি প্রদান থেকে বিরত থাকে। হেফাজতের পক্ষ থেকে যেকোন মুল্যে সমাবেশের ঘোষনা দেয়া হয়। নির্দেশ অনুযায়ী হেফাজতের নেতাকর্মীরা সমাবেশের জন্য বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট অভিমুখে আসতে থাকে। কিন্তু হেফাজতের মিছিল পল্টনের কাছাকাছি আসতেই পুলিশ একদম কাছ থেকে মুহুর্মূহ গুলি, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হামলা শুরু করে। ফলে হেফাজতের নেতা কর্মীরা পুলিমের ধাওয়া খেয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সামনে গেলে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। শুরু হয় ত্রিমুখী সংঘর্ষ। ওদিকে পল্টনেও চলতে থাকে সংঘর্ষ।





























একদিকে পল্টন-বিজয়নগরে পুলিশের সাথে হেফাজতের সংঘর্ষ চলতে থাকে অপর দিকে হেফাজতকে মতিঝিলে সমাবেশ করতে দেবার অনুমতি দেয়ায় লক্ষ লক্ষ হেফাজত কর্মী ও সাধারন জনতা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জড়ো হতে থাকে। দুপুর ৩ টায় আওয়ামী লীগের আশরাফ হেফাজতকে সন্ধার মধ্যেই শাপলা চত্বর ছেড়ে যাবার হুমকি দেয়। কিন্তু হেফাজতে ইসলাম সকল প্রকার হুমকি ধমকি কে পরওয়া না করে শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষনা করে। বিকেলে আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব শাপলা চত্বরে উপস্থিত হবার জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত এলে পুলিশ বাধা দেয়। এবং তাকে যেতে দেয়া হয় না। ফলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।  সংগঠনের নেতারা বলেন, গুলি করে আমাদের আন্দোলন দমানো যাবে না। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনে এক মাস অবস্থান করব, এক সাগর রক্ত দেব। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার দায় নিয়ে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগও দাবি করেন তারা।






এদিকে পল্টন-বিজয়নগরের সংঘর্ষ রাতভর স্থায়ী হয়। কিন্তু রাত দশটার দিক থেকে সকল সংবাদ কর্মীদের সরিয়ে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয় হয় মতিঝিল-পল্টন-বিজয়নগর সহ আশেপাশের সকল এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ। সরকার থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় সত্য প্রকাশে একনিষ্ট সংবাদ মাধ্যম দিগন্ত টিভি। ওদিকে জিকির-স্লোগান-বক্তব্যে চলতে থাকে মতিঝিলের অবস্থান কর্মসূচি।

ভিডিও:
https://www.facebook.com/photo.php?v=134867286703647

রাত ২.৩০, ০৬/০৫/২০১৩

পুলিশ বিজিবি র‌্যাব ও প্রফেশনাল শুটার বাহিনী দ্বারা গঠিত ১০০০০ হাজার সদস্যের যৌথবাহিনী হামলে পড়ে শাপলা চত্বরের সমাবেশে অবস্থানকারী লক্ষ লক্ষ হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীর উপর। একদল ফকিরাপুল মোড় হয়ে নটরডেম কলেজের সামনে দিয়ে আরেক দল দৈনিক বাংলা মোড় থেকে শাপলা চত্বরের মঞ্চের অভিমুখে। হাজার হাজার রাউন্ড গুলি, গ্রেনেড, পিপার স্প্রে, টিয়ার শেল, বোমা, গরম পানি নিক্ষেপ করতে করতে তেড়ে যায় নিরস্ত্র শান্তি প্রিয় সাধারন মানুষগুলির দিকে। তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু হাজার হাজার বুলেট বোমা একের পর এক কেড়ে নিতে থাকে নিষ্পাপ প্রানগুলি। ইসলামের জন্য প্রান বিলিয়ে দেন হাজারো ইসলাম প্রেমী জনতা। একপর্যায়ে দুদিক থেকে চালান বুলেট বোমার সামনে তাদের এ প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। ওলিতে গলিতে আশ্রয় নিয়ে তারা আবারো প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু আওয়ামী হায়েনাদের উন্মাদের মত আক্রমন ও লাগাতার গোলাগুলির সামনে তারা এ প্রতিরোধ ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন ২৫০০ এর অধিক হেফাজতে ইসলাম এর কর্মী ও সাধারন জনতা। আহত হন ১০০০০ এরও বেশী।

গনহত্যায় অংশগ্রহনকারী এক পুলিশের বক্তব্য দেখুন:
https://www.facebook.com/photo.php?v=462343463853623

গনহত্যা সংঘটনের সময়কার একটি ভিডিও:
https://www.facebook.com/photo.php?v=10200195623309108

আরো জানতে এই লিংকগুলোতে ক্লিক করুন:

http://www.dailyinqilab.com/details_news.php?id=106848&&%20page_id=%205

গনহত্যার প্রমানসমূহ:

















































কোরআন পোড়ানোর সাথে হেফাজতকে জড়িয়ে মিথ্যাচারের প্রমান:

যারা বইয়ের দোকান, যেখানে অনেক কপি কোরআন শরীফও ছিল, পোড়ানোর সাথে হেফাজতকে দোষারোপ করছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি। আপনাদের একটু মাথা খাটাতে বলবো।

এই ছবিটা google earth থেকে নেয়া। ছবির উপরের দিকে উত্তর দিক। স্বভাবতই দক্ষিণ দিক ঠিক নিচের দিক।


ছবিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ দিকের গেট, মানে দক্ষিণ গেটটি মার্ক করা আছে। আরও মার্ক করা আছে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

আমরা সবাই ভিডিওতে দেখেছি বায়তুল মোকাররমের গেটের সামনের দোকানগুলোতে আগুন দেয়া হয়, বই পোড়ানো হয়।
এইবার আপনাদের প্রশান করি, খেয়াল করেছেন বায়তুল মোকাররমের কোন গেটের সামনে। হ্যাঁ, দক্ষিণ গেটের সামনে
(https://www.facebook.com/photo.php?v=648796955137799)
এই মানচিত্র ভালো করে দেখুন। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সবচেয়ে কাছে কাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়? বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের।

সবাই যদি গতকাল ভিডিওগুলা ভালোভাবে দেখে থাকেন এইটা খুব ভালোভাবে জানার কথা এই জায়গাটা কাদের দখলে ছিল। হ্যাঁ, ঠিক আওয়ামী লীগ কর্মী আর গোপালি পুলিশের দখলে ছিল
(https://www.facebook.com/photo.php?v=123772774488571)। এইখানে হেফাজতের কর্মীরা আসার চেষ্টা করলে পিটিয়ে দুইজনকে হত্যা করা হয়। এই ভিডিও নিশ্চয়ই দেখেছেন।

আর হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয় কখন? হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের একটি মিছিল বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট দিয়ে পুরানা পল্টন যাওয়ার সময়
(https://www.facebook.com/photo.php?v=497151467007139)। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে পুরানা পল্টন যাওয়ার পথে কোনভাবেই এই দক্ষিণ গেটের সামনের রাস্তা ব্যবহার করা লাগে না।

তাহলে কোরআনসহ দোকানগুলো কিভাবে হেফাজতের কর্মীরা পোড়ালো যদি ঐ এলাকায় তো তারা ঢুকতেই পারলো না? একটু মাথা খাটান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে হেফাজত এতোবড় ঘটনা ঘটবে আর আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী চুড়ি পড়ে বসে থাকবে তা কখনই সম্ভব না। শুধুমাত্র তখনই এটা সম্ভব যখন তারা নিজেরাও এই কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে কাজ করবে।

কিছু কি বুঝতে পারছেন?? কারা করেছে এটা নিয়ে কি এখনো সন্দেহ আছে?? ঠিক আছে সন্দেহ থাকলে এই লিংক থেকে ঘুরে আসুন। সন্দেহ দুর হয়ে যাবে।
http://www.dailyinqilab.com/details_news.php?id=106839&&%20page_id=%205